একটি বেদনাদায়ক গল্প

একটি বেদনাদায়ক গল্প অনেক অনেক দিন আগের কথা , এক ছোট্ট জায়গার গল্প। জায়গাটা ঠিক গ্রাম না , আবার শহর তো নয়ই। তো, সেই জায়গায় একটা বাড়িতে একটি মুরগি ছিল। মুরগিটি রোজ দিন সকালে উঠে আওয়াজ করে করে ডাকতো, আর সেই আওয়াজে তার মালিক এর ঘুম ভাঙতো। তার মালিক তাকে বেশ ভালোবাসতো। সকালে ঘুম ভাঙার পর, তার মালিকের প্রথম কাজই ছিল, তাকে রুটি খাওয়ানো। রাতের বাসি রুটিও সেই মুরগি ভীষণ রসিয়ে খেত। আর ছিল তার মালিকের এক ছেলে। সেও ঘুম থেকে সেই মুরগির পিছনে ছুতে বেড়াতো। মুরগিও সেই আনন্দ থেকে তাকে কোনোদিনই বঞ্চিত করতো না। কারণ এই খুনসুটির সময়টা ছিল তার কাছেও ভীষণ প্রিয়। এই ছিল সেই তিনটি প্রাণের প্রতিনদিন সকালের রোজনামচা। এই করে করে মুরগি ও সেই ছেলেটি বড় হয়। অল্প থেকে খানিকটা বড়, তারপরে আরো খানিকটা। আরো খানিকটা বড় ছেলে, তাই স্কুল এ যেতে শুরু করে। এই বড় হওয়ার সাথে সাথে পাল্টায় চারিদিক। পাল্টায় সময়। আর সময়ের গতি তাদের ভালোবাসার পটে এঁকে দেয় কিছু অচেনা আঁকা , যার কোনো টার সাথেই তাদের পরিচয় কম। সকালে ইস্কুল এর চাপে , তাদের খেলার সময় যেমন একদিকে কমতে থাকে, অন্য দিকে তেমনি বাড়তে থাকে তাদের দূরত্ব। রোজ দিনের সকালের সেই খেলার সময় ছোট ছোট হতে হতে যখন একদিন , মিলিয়ে যায় বর্ষার শেষ মেঘের মতো, তখন একাকিত্ব একদিন দুপুরের খামখেয়ালিপনাকে জানায় নির্বিবাদ আমন্ত্রণ। সেই খামখেয়ালিপনার অঙ্গুলি লেহনে আরো খানিকটা বড় মুরগি টপকে যায় বাড়ির উঁচু দেয়াল। সেই দেয়ালের বাইরের এক অদ্ভুত জগৎ। এর আগে কোনো দিনই দেখেনি সে। বড় মাঠ। ঘাসে ঢাকা জমি। খোলা আকাশ আর তার থেকেও বেশি আনন্দ হলো তার মতো আরো বেশ কয়েকটা মুরগিকে দেখে। দেয়াল টপকে এই নতুন জগৎকে তার যার পর নাই ভালো লাগলো। খুশি ও তখন বেশ লাগাম ছাড়া। সে ছুট্টে গেলো মাঠের দিকে। মাঠের পাশেই ছোট্ট গ্রাম। গ্রাম এর এক দাওয়ায় বসে, এক বৃদ্ধ, আরো কয়েকটা মুরগিকে ধানের খুদ খাওয়াচ্ছিল। সেও খেলো বেশ কয়েক তুলে মাটি থেকে। নতুন খাবার খেতেও যেমন ভালো লাগলো, তেমনিই আবার অনেকগুলি নতুন বন্ধু পেয়ে তার মন তখন আনন্দে আত্মহারা। ভীষণ ভালোগ লাগলো তার এর নতুন অনিভূতিটাকে। তার বার বার ফিরে পেতে চাইলো তার এই নতুন মুহূর্ত গুলোকে। এই কারণেই তার জীবনে সংযোজন হলো এই নতুন অভ্যেসের। সুযোগ পেলে সে পাড়ি দিতো তার স্বাধীনতার হাতছানি অনুভিতকে কাছ থেকে অনুভব করতে। দিন পেরিয়ে পড়লো সপ্তাহ , তা ছেড়ে পড়লো মাস। আর ধীরে ধীরে কখন এটাই যে তার জীবন হয়ে গেলো বোধহয় সেটাও সে ঠিক তাহার করে উঠতে পারলো না। কিন্তু পুরাতন প্রেম যেমন শীতের লেপের মুড়ি দেয়া নিশ্চিন্ত ঘুম থেকে মাঝে মাঝে জেগে উঠে হটাৎ হতে করে দেয় একটা সুড়সুড়ি, দেন তেমনি সেই মালিক হটাৎ তা ভুলে মুরগিকে হটাৎ একটাদিন ফিরে পেতে চাইলো। সময়ের চোরা স্রোতে টানে তার সেই পরম ভালোবাসার স্বাধীন জীবন থেকে অনবগত। তার সেই পূর্ণ প্রেম এর কাছে সময় যেন আজ থমকে আছে। চাইলেই যেন সে একমুহূর্তে ফিরে যেতে পারবে সেই পুরোনো জীবনে। ভালোবাসা ভেজা হালকা গন্ধকে বুকে মেখে সে আজ খুঁজতে বেরোলো তার ভালোবাসার মুরগি কে। ঘরের চেনা কোন গুলোই যখন তখন তার চান প্রাণকে ফিরিয়ে দিতে প্রত্যাখান করলো, তখন মরিয়া প্রাণ ছুটে অচেনা কোনো দিনে। হটাৎ অনুভব করলো দুঃসহ শূন্যতাকে। নিজের মনের অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে , তার অসহায় দুটো চোখ খুঁজে পেলো তার ভীষণ চেনা প্রাণ কে অচেনা একটি পাড়ায় , তার থেকেও অচেনা কিছু সঙ্গে। হটাৎ মনে পঞ্চাশমণি কোনো বিশাল পর্বত যেন নেমে এলো তার উপর। স্তব্ধ হয়ে নির্বিকার চিত্তে সে শুন্য বুকে ফিরে এলো ঘরে। আজ অনেক দিন পরে তার রাতের খাওয়াটা জমিয়ে হলো।